রাইফেল রোটি আওরাত : আনোয়ার পাশা

রাইফেল রোটি আওরাত : আনোয়ার পাশা

দুর্ভাগ্য যে যখন বাংলাদেশের লেখকদের মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা প্রথম এবং সত্তর দশকের অনন্য শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ নিয়ে লিখতে বসেছি তখন লেখককে স্মরণ করতে হয় বেদনাবিদুর মনে। কারণ, অসাধারণ দীপ্তিমান প্রখর মেধাবী সৃষ্টিশীল ও মননশীল কবি ও কথাসাহিত্যিককে পাকবাহিনীর দোসর স্বাধীনতা বিরোধী এদেশের কুলাঙ্গার আল-বদর বাহিনী কর্তৃক এই ক্ষণজন্মা লেখক ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর অপহৃত ও শহিদ হন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৩ বছর। তিনি মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে বিজয়ের যে আলোকচ্ছটার আভাস দিয়েছেন, দুর্ভাগ্য যে—সুদীর্ঘকালের সংগ্রাম, ত্যাগ, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতার সূর্যের আলো মাত্র দুদিনের জন্য খুনি আল-বদর বাহিনীর নৃশংসতার জন্য তিনি দেখে যেতে পারেননি। হাজী মকরম আলী ও সাবেরা খাতুন দম্পতির সন্তান স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত কবি ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ার পাশা বর্তমান ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর মহকুমার রাঙামাটি ডবকই গ্রামে ১৯১৮ সালের ১৫ এপ্রিল (২রা বৈশাখ, ১১৩৫ বঙ্গাব্দ) ভূমি স্পর্শ করেন। তিনি ১৯৪৬ সালে ভাবতা আজিজিয়া উচ্চ মাদ্রারা থেকে মাদ্রাসা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯৪৮ সালে আইএ পাস করেন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে। তারপর রাজশাহী কলেজ থেকে  ১৯৫১ সালে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে ডিগ্রি অর্জন করেন। মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করে মাদ্রাসা থেকে কর্মজীবনও শুরু করেন। তিনি ১৯৫৪ সালে ভাবতা আজিজিয়া হাই মাদ্রাসায় প্রথম শিক্ষকতা পেশা শুরু করেন এবং চার বছর পর পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এই কলেজেই তিনি অধ্যাপক পদমর্যাদা লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অস্থায়ী প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৭০ সালে তিনি জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে পদোন্নতি পান। মৃত্যু পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়েই তাঁর সমাধি রচিত হয়।

 

রাইফেল রোটি আওরাত

এই উপন্যাসের কাহিনি ১৯৭১ সালের মার্চের ২৫ তারিখের মধ্য রাত থেকে শুরু করে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের কয়েক দিনের মধ্যে আবর্তিত হলেও স্মাতিচারণ ও চেতনাপ্রবাহের বর্ণনায় অতীতের প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু চরিত্রের খোলসে পরিপুষ্ট হয়েছে দ্বিজাতি তত্ত্ব, দেশ ভাগ, ধর্মান্ধতা ও হিপোক্রেসি। আধা-ডকুমেন্টারি এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুদীপ্ত শাহিন এবং তাঁর পরিবারকে কেন্দ্র করে অখ্যানটি পরিপূর্ণতা লাভ করে। লেখককে যেন দেখা যায় সুদীপ্ত শাহিনের মধ্যে। সত্তর দশক মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিপাদ্য করে রচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে এই উপন্যাসেই ঢাকা শহরে পাকসেনাদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ, রক্তস্রােত, পরিবারের প্রিয় মানুষদের হারানোর বেদনা, লাশের মিছিল, স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, ধর্মান্ধতা, ধর্মের লেবাসে ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য আইয়ুব ও ইয়াহিয়ার জন্য জঘন্য দালালি, সত্তরের নির্বাচন, বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীদের মনোভাব ও আচরণ ইত্যাদি সমগ্র বিষয়ের পূর্ণতা পাওয়া যায়। রাজনৈতিক ইতিহাসের মতো শিল্পসাহিত্যেরও ইতিহাস আছে যে ইতিহাসকে মুছে না দিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে গবেষকগণ বিবেচনা করেন। এই উপন্যাসের ভূমিকা লেখেন কাজী আবদুল মান্নান। ভূমিকাপর্বে জানা যায় যে ১৯৭১ সালের এপ্রিলে লেখা শুরু করে জুন মাসে শেষ করেন এই গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস। একাত্তর সালে রচিত তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘একটি কালো মেয়ের কথা’ এবং শওকত ওসমানের রচিত ‘জলাঙ্গী’। সত্তর দশকে প্রকাশিত উপন্যাস ও উপন্যাসিকা মোট ১৮টি পাওয়া যায় যেগুলোর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের থিম, মোটিফ, সিনট্যাক্স, কলাকৈলব্য, মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, কাহিনি বিন্যাসের কারণে ২০টি অধ্যায়ে ১৮০ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি উচ্চতর মান্যতা পেতে পারে। তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ রূপ এতে অঙ্কিত হয়নি। কারণ, জুন মাসে উপন্যাসটি লেখা শেষ হওয়াতে, হয়তো, অথবা লেখকের লক্ষ্য স্থিরের কারণেও হতে পারে যুদ্ধের প্রারম্ভিক দিকের ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ও আশেপাশের কিছু স্থানের সীমানায় মার্চের শেষান্তে কাহিনির সমাপ্তি ঘটে।

 

‘রাইফেল রোটি আরওরাত’ উপন্যাসের ভরকেন্দ্রে রয়েছে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুদীপ্ত হান্নান। পঁচিশে মার্চের গভীর রাতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সুদীপ্ত শাহিন সপরিবারে বাসা ছেড়ে পালিয়ে বন্ধু ফিরোজের বাড়িতে আশ্রয় নেন। উপন্যাসের মূল কাহিনি পঁচিশে রাতের গণহত্যা থেকে শুরু। সেই রাত যে কতটা ভয়াবহ ছিল, কতটা আতঙ্কের রাত ছিল কেবল তারাই অনুধাবন করতে পারবেন যারা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বা আশেপাশে ছিলেন ও জীবিত রয়েছেন। এমন ভীবিষিকাময় প্রহর মানবজীবনের জন্য কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। লেখকের ভাষায় :

এই প্রথম রাত্রি তাঁর কাটল বন্ধুর বাড়িতে। উনিশ শো একাত্তর খৃষ্টাব্দের সাতাশে মার্চের দিনগত রাত্রি পার হয়ে আটাশে মার্চের ভোরে এসে পৌঁছলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুদীপ্ত শাহিন। ঠিক এর আগের দু’টো রাত? পঁচিশ ও ছাব্বিশ তারিখের দিন পেরিয়ে যে-দুই রাতের সূচনা হয়েছিলো তাদের কথা সুদীপ্ত স্মরণ করলেন। সে কি মাত্র দু’টো রাত। দু’টো যুগ যেন। পাকিস্তানের দুই যুগের সারমর্ম। বাংলাদেশ সম্পর্কে পাকিস্তানীদের বিগত দুই যুগের মনোভাবের সংহত প্রকাশমূর্তি। শাসন ও শোষণ। যে কোন প্রকারে বাংলাকে শাসনে রাখ, শোষণ কর। পৃষ্ঠা ১

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যারা কমবেশি জানেন তারা হয়তো পঁচিশে মার্চের গভীর রাতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের কথাও জানেন। এ-রকম হত্যাকা- হিটলারের নাৎসী বাহিনী ছাড়া আর কেউ ঘটিয়েছে কি না বলা মুশকিল। পঁচিশ ও ছাব্বিশ তারিখের রাতে যারা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছিলেন তারা বুঝতে পেরেছিল মৃত্যু কত ভয়ঙ্কর এবং পাকিস্তানি সেনারা কতটা নির্মম ও পৈশাচিক আচরণ করতে পারে। পঁচিশে মার্চের কাল রাত্রির ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা এই উপন্যাসে যেভাবে পাওয়া যায় তা যেকোনো পাঠক শিহরিত হতে বাধ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্মম হত্যাকা-, এখানে সেখানে পড়ে থাকা তাদের বীভৎস লাশের বর্ণনা, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মধুর কেন্টিনের মধুদা’র হত্যাকা-ের চিত্র যেকোনো পাষাণ মনের পাঠককেও বেদনাকাতর করে তোলে। উপন্যাসের কাহিনি এগিয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এবং এর আশেপাশের এলাকাকে কেন্দ্র। সুদীপ্ত শাহিনের বন্ধু কবি ফিরোজ ও তার পত্নী মিনাক্ষী নাজমা তাদের ছায়া হয়ে থেকেছে। সেই দুই রাতের ঘটনাই এই বস্তুত উপন্যাসের উৎসমুখ।

সুদীপ্ত শাহিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক। কে এই অধ্যাপক? এই নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আদৌ কি কোনো অধ্যাপক আছেন কি না তা জানার জন্য লেখক উৎসুক/প্রবৃত্ত হন। মূলত সাতচল্লিশের দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগের মাধ্যমে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান যে ধর্মান্ধ ও কূপমু-ুকদের নিয়ে অসাড় একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা প্রমাণ পাওয়া যায় সুদীপ্ত শাহিন নামের গূঢ়ত্বের মাধ্যমে। সুদীপ্ত শাহিনের বর্ণনায় বিশ^বিদ্যালয়ের ধর্মান্ধ কয়েকজন শিক্ষকের বাংলা ভাষায় নামের বিষয়ে তাদের কূপমু-ুকতা শিল্পসুষমায় উৎকীর্ণ হয়েছে। তৎকালীন বিশ^বিদ্যালয়ের গোঁড়া-পশ্চাৎপদ কয়েক জন শিক্ষকের যে চরিত্র তিনি চিত্রিত করেছেন বর্তমান সময়ে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও যেন এমন চরিত্র আরও বেশি লক্ষ করা যায়। প্রথমেই শিক্ষক হিসেবে পরীক্ষা দিতে গিয়ে ‘সুদীপ্ত’ হিন্দু নাম, মুসলমানের নাম এ-রকম হতে পারে না, তাই কূপমু-ুকরা তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে এবং পরপর তিনবার এ-রকম অপমানজনক অবস্থার শিকার হলেন যদিও পরে চাকরি পেয়েছিলেন মফস্বলের একটি কলেজে। সেখানে দীর্ঘ আঠারো বছর কাজ করার প্রমোশন নিয়ে প্রথমে জগন্নাত কলেজে এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু প্রমোশনের নেশায় পেয়ে যাওয়ার পর তিনি নাম এফিডেভিট করে নাম পাল্টিয়েছিলেন যে নাম কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই পরিচিত ছিল। তিনি কবিতা লিখতেন সুদীপ্ত শাহিন নামেই। এই উপন্যাসের আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো গল্পের ভাঁজে ভাঁজে ঐতিহাসিক তথ্য ও সামাজিক নিগূঢ় সত্য ও তথ্যের সন্নিবেশ। ‘তখন মাঠ ফাঁকা ছিল’ বলতে লেখক একটি অপ্রকাশিত সত্যকেই প্রকাশ করেছেন। দেশ ভাগের পর অনেক বিদগ্ধ ও যোগ্য মানুষ ভারতে চলে যাওয়াতে অনেক সেক্টরই ফাঁকা ছিল। বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়, তখন অযোগ্য লোক দিয়েই প্রশাসন চালাতে হয়েছে। অনুরূপভাবে, এবং প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের শাসকরা তৎকালীন পাকিস্তানে বড়ো বড়ো পদপদবি দখল করে রাখাতে এদেশের মানুষকে প্রত্যাশিত মানে দক্ষ হয়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া হয়নি। পাকিস্তানিদের ব না ও শোষণের ফলে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও সব সেক্টরে উচ্চতর পদপদবিগুলো ফাঁকা ছিল। মাঠ ফাঁকা ছিল। বলা বাহুল্য যে, মানবসম্পদের এই ঘাটতি একটি দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, যা এখনো প্রত্যাশিত মানে ও যথাযথভাবে পূরণ হয়েছে কি না বলা মুশকিল। লেখকের বক্তব্যটি এখানে প্রণিধানযোগ্য :

সদ্য তখন হিন্দু মধ্যবিত্তের একটা বিপুল অংশ দেশ ত্যাগ ক’রে চলে গেছেন। মাঠ ফাঁকা। ফাঁকা মাঠে গোল দিতে পারলে কে আর কষ্ট ক’রে খেলা শেখে? এবং কোন খেলা না শিখেই খেলায় জয়লাভ চাইলে চরিত্র হারাতে হয়। চরিত্রহীনদের সম্বল তোষামোদ, আর দালালি। পাকিস্তানে এখন দালালির জয়জয়াকার, প্রচ- নির্লজ্জ দালালি তোষামোদ আর উৎকোচ। সুদীপ্তর এখন প্রবল আফসোস হয়। তিনি কেবলি কবিতা লিখতে শিখেছিলেন। পৃষ্ঠা ৫

পূর্বেই বলা হয়েছে যে, এটি সম্পূর্ণ ফিকশন নয়, ফিকশনের পাশাপাশি ইতিহাসের যুগপৎ বহমানতা কখনো পাঠককে আবেগাকুল করে আবার মননের কড়াও নাড়তে পারে। মৃত মায়ের স্তন চুষছে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া এক অবোধ শিশু, ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেবের বিধবা পুত্রবধূই ছিল সেই মৃত মা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বিখ্যাত শিক্ষকের হত্যাকা-ের বর্ণনা মর্মান্তিকভাবে বর্ণিত হয়েছে। অবাক করার মতো একটি বিষয় হলো যে মানবিক ও দার্শনিক ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, যিনি ছিলেন চিরকুমার কিন্তু তার পালকপুত্র ও পুত্রবধূ ছিল মুসলমান। অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই মহান মানুষটি তাঁর চাকরির সমস্ত টাকাই খরচ করতেন গরিব ছাত্রদের জন্য যাদের ধর্ম পরিচয় কখনই তিনি দেখতেন না। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের পাশাপাশি মধুর ক্যান্টিন একটি প্রতিষ্ঠানের নাম যা কখনও মুছে দেওয়ার মতো নয়। সেই প্রতিষ্ঠানের মধুদা অতি পরিচিতি স্বাধীনতা আন্দোলনেরও একজন সক্রিয় কর্মী। বলা অতিরঞ্জিত নয় যে, এদেশের রাজনীতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অগ্রগণ্য ভূমিকা এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্দেশনা ইতিহাসে উজ্জ্বল। এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দের মিলনস্থল বা আড্ডার স্থল ছিল মধুর কেন্টিন। মিটিং-মিছিল কেন্দ্রও। সেই মধুদার লাশও ছিল এই সারিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো নারকীয় হত্যাকা-ের মূল নায়ক চক্রান্তকারী ড. খালেক। তার ভাই মালেকও ছিল একই প্রকৃতির ভয়ানক স্বার্থপর। মালেক আইয়ুবের এত বড়ো দালাল ছিল যে সে আইয়ুবের নামে মসজিদে খুৎবা পড়ানোর প্রস্তাব পর্যন্ত দিয়েছিল। ড. খালেক উপরে উপরে ধার্মিক হলেও ভেতরে ভেতরে ভয়ানক শঠ, লম্পট। মালেকের পিয়ারের দোস্তরা, পাকিস্তানি সেনারা তার বাসায় হানা দিয়ে স্ত্রী ও সুন্দরী দুই কন্যাকে পিয়ারের বন্ধু হিসেবে তিন দিনের জন্য দাবি করে। কিন্তু মালেক বাধা দিলে তাকে গুলি করে হত্যা করে মা-ঝিদের নিয়ে যায়। তিন দিন পরা ফেরত দিয়ে যায় খালেকের কাছে, সাথে তিনশ’ টাকা চিকিৎসার জন্য। ড. খালেক তাদের জীবন্ত ফেরত দেওয়াতে পাকসেনাদের প্রশংসায় প মুখ।

পূর্বেই বলা হয়েছে, উপন্যাসটি কিছুটা ডকুমেন্টারি। তাই বিশ^বিদ্যালয়ের প্রথিতযশা যেসব শিক্ষককে মার্চ মাসে হত্যা করা হয়েছিল তাদের নাম এখানে উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি ফিকশন নির্মাণে লেখক দারুণ পা-িত্যের পরিচয় দিয়েছেন। রক্তের বন্যা বয়ে যাওয়া উপন্যাসের ক্যানভাসে মাঝে মাঝে হিউমার সংযোজন করে পাঠককে একঘেঁয়েমি পাঠের শৃঙ্খল থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছেন। এগুলো উপন্যাসকে সমৃদ্ধ করেছে, করেছে সার্থক।

পঁচিশে মার্চের গভীর রাতের পর ঢাকায় অধিকাংশ সময়ই কার্ফিউ দেওয়া হতো। কার্ফিউ থাকত না তখন সুদীপ্ত শাহিন ফিরোজকে নিয়ে ঢাকার পরিস্থিতি দেখতে বের হয়েছে। কয়েকটি হত্যাকা-ের নৃশংতার বর্ণনা ও বীভৎস লাশের বর্ণনা অত্যন্ত নির্মম ও কঠিন। এ ধরনের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা কিংবা প্রত্যক্ষ করার পর সুস্থ থাকা কোমল হৃদয়ের মানুষের পক্ষে অসম্ভব। শুরুতেই বলা হয়েছে উপন্যাসের যাত্রা শুরু হয়েছে মার্চের ছাব্বিশ তারিখ থেকে শেষ হয়েছে মার্চের শেষের দিকে যখন স্বাধীন বাংলার বেতারকেন্দ্র চাল হলো। এই সময়ের উপন্যাসের কাহিনি পূর্ণতার দিকে এগিয়েছে আর পাশাপাশি গল্পের ভেতরে গল্প ঢুকে গেছে। সুদীপ্ত শাহিন ও ফিরোজের চরিত্র ছাড়া কোনো চরিত্রই পূর্ণতার দিকে যেতে পারেনি। এ যেন পথিক হাঁটছে আর পথে পথে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, ওরা ওখানে থেমে গেছে আর সুদীপ্ত শাহিন এগিয়ে যাচ্ছে পরিণতির দিকে।

ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো পাকিস্তানের পক্ষে নিয়েছে এবং তারা অখ- পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার করে। কমিউনিস্টরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে গেছে তারা হানাদারদের প্রতিরোধ করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর তখনকার ভূমিকা, সাতই মার্চের ভাষণের একাংশ তিনবার উল্লেখসহ বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতারের বিষয়টি আনা হয়েছে। পাকিস্তানকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের কারণে শেখ মুজিবকে পাকিস্তানিরা বিচার করবে। তখনকার ইতিহাস তাই তো বলে, বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য প্রহসনের বিচারও সাজানো হয়েছিল। কিন্তু এই উপন্যাসের কাহিনি যেহেতু মার্চের শেষে শেষ হয়েছে তাই মার্চের পরবর্তীকালের ঐতিহাসিক বিষয় স্থান পাওয়ারও কথা নয়। মুজিব সম্পর্কে তখন পিন্ডির যে মনোভাব ছিল তা লেখকের ভাষায় :

পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্ধত কণ্ঠস্বর রেডিওতে বেজে উঠল শেখ মুজিবুর রহমান দেশের শত্রু, বিশ্বাসঘাতক…। কে বলছে এ কথা? স্বয়ং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান। কিন্তু বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ছেলেবুড়ো জানে, শেখ মুজিবুর রহমান তাদের বন্ধু। বাঙলার বন্ধু শেখ মুজিব। কিন্তু বাঙলার শত্রুরা কী বলে শোনো। … দেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। সে জন্য তাঁর শাস্তি না হয়ে যায় না।… শেখ মুজিবুর রহমানের শাস্তি! দেভে ইয়াহিয়া খান! অভিযোগ? পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান। পৃষ্ঠা ১১৯

এই উপন্যাসে কয়েকটি চরিত্র পাঠকের হৃদয়ে দাগ কাটার মতো। নারকীয় হত্যাকা-, পৈশাচিক নির্যাতনের ফলে তারা মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দেশের স্বাধীনতার জন্য হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করার মানুষ অনেক ছিল। এই রকম মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ঘৃণ্য পাকিস্তানিদের প্রতি তীব্র ঘৃণা ও প্রতিবাদেরই প্রকাশ পেয়েছে। এই উপন্যাসেও স্বেচ্ছায় আত্মাহুতি দেওয়ার কয়েকটি ঘটনা পাঠকহৃদয়কে বিদীর্ণ করে। এ-রকম একটি চরিত্র পলি ভাবি। সুদীপ্ত শাহিনের টিউটোরিয়াল, ছাত্র নাজিম হোসেনের ভাবি, পলি ভাবির তিন বছরের শিশুকন্যাকে চোখের সামনে হত্যা করার পর নিজেও জিঘাংসু হয়ে পড়ে। তারপর প্রথমে প্রেমের অভিনয় করে এক পাঞ্জাবি অফিসারকে হত্যা করে আরও বেপরোয়া হয়ে যায়। তখন সে নাজিমের কাছ থেকে মাইন সংগ্রহ করে বুকে বেঁধে পাকসেনাদের বহনকারী একটি ট্রাকের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দিয়ে কিছু সৈন্যকে বধ করল।

এরপর প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী আবদুল্লাহ মনসুর আমনের চরিত্রটি এখানে উল্লেখ না করলেই নয়। শিল্পী আমনের পাঁচ বছরের ও তিন বছরের শিশুসহ তার স্ত্রীকে হত্যা করে হানাদাররা। তাদের লাশ দেখে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এবং ছন্নছাড়া হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। এক সময় ঘটনাক্রমে নীলক্ষেতে সুদীপ্তকে পাকসেনাদের গুলি থেকে বাঁচিয়ে নিজে সেনাদের গাড়িতে ইট ছুড়ে মারার সময় ওদের গুলিতে আহত হলে কিছু লোক তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু হতভাগা আমন বাঁচেনি। একটি পরিবার নিঃশেষ হয়ে গেল।

এস.এম হলের মোসাদ্দেক সাহেবের স্ত্রীর হত্যা দৃশ্য এবং তৎপরবর্তী ছাত্রদের হত্যা মর্মান্তিক। সেনারা কয়েকজন ছাত্রকে হত্যার পূর্বে বলল,

‘বোলো জয় বাংলা।’

ছেলেরা কি বলবে। ভয়ে সকলের গলা শুকিয়ে গেছে। তা’ শুকোতে পারে। তবু কথা বলবে না এ কেমন বে-আদবি! দেখাচ্ছি মজা! একটি সৈনিক ছুটে গিয়ে একটি ছাত্রের তলপেটে মারল একটা জোর-লাথি। ভারি বুটের লাথি। একটা কাতর শব্দ ক’রে প’ড়ে গেল ছেলেটি। কিন্তু রেহাই মিলল না। মিলল বেয়নেটের খোঁচা। আর সঙ্গে সঙ্গে ভীতস্বরে বাকি ছেলেগুলি বলে উঠল ‘জয় বাংলা’।

তখন ওদেরকে হত্যা করার অজুহাত পাওয়া গেছে এবং সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে ওদের কণ্ঠ চিরদিনের জন্যে স্তব্ধ করে দেয়।

পলি ভাবির মতো কত নারী আত্মহুতি দিয়েছে তার ইতিহাস হয়তো কোনো দিন জানা যাবে না। এই চরিত্রটি কাল্পনিক মনে হলেও এ-রকম জীবনের বাজি রেখে নিজেদের সম্ভ্রম বাঁচাতে অনেক মেয়ে আত্মহত্যা করেছে এবং অনেকেই পাকসেনাদের আক্রমণ করে আত্মহুতি দিয়েছে তার ইতিহাস আছে। পিরোজপুরের ভাগীরথী পাকসেনাদের ক্যাম্পে বন্দি ছিলেন। পরে ঘটনাক্রমে নিজের জীবন বাজি রেখে পাকসেনাদের হত্যা করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের গোপনে তথ্য দিতেন। এক সময় সেনারা টের পেয়ে ট্রাকের পেছনে ভাগীরথীর দুই পা বেঁধে রাস্তায় ছ্যাচড়িয়ে মৃত্যুদ- দেয় এবং পরে লাশটি নদীতে ফেলে দেয়। এই চরিত্রটি নিয়ে কথাসাহিত্যিক মনি হায়দার ‘কিংবদন্তি ভাগীরথী’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন।

রোকেয়া হলের কয়েকজন ছাত্রীর ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যার ঘটনাটিও ঐতিহাসিক ঘটনা। পাকিস্তানিদের নারী নির্যাতনের ভয়াবহ ঘটনাগুলো যুগ যুগ ধরে এদেশের মানুষের হৃদয়কে দগ্ধ করবে।

শহিদ মিনার আন্দোলনের উৎসস্থল। এজন্য এটিও গুঁড়িয়ে দেওয়ার বর্ণনাও এই উপন্যাসে বিধৃত হয়েছে। একইসঙ্গে সারা দেশেই তখন ওরা মন্দির ধ্বংস করত। তারও প্রতিচিত্র উপন্যাসে পাওয়া যায়। সুদীপ্ত শাহিনের কথনে ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শামজ্জোহার হত্যা, আগরতলা ষড়যন্ত্রের মামলার আসামী কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের হত্যাসহ এবং রাজনৈতিক কিছু ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উপন্যাসে পাওয়া যায়।

রাজনৈতিক প্লট পরিবর্তনের পর পর দেখা যায় দুমুখো মানুষের চরিত্রের প্রকৃত চিত্র। একাত্তরের মার্চের শেষে দিকে মানুষের চরিত্রও বদলাতে শুরু করে। দোকানপাটের সাইনবোর্ড, গাড়ির নাম্বার প্লেটসহ বিভিন্ন স্থাপনার সাইনবোর্ড উর্দুতে লেখা হয়ে গেছে। ময়মনসিংহের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী তার দোকান একজনের জিম্মায় গিয়েছিল, সেটিরও সাইনবোর্ড উর্দুতে হলো, এক বিহারি সেটি দখলও নিল। এগুলোকে প্রতীকী এবং এই ছিল একাত্তরের চিত্র। কত ব্যবসায়ী ফতুর হয়ে গেছে, লাখপতি হয়ে গেছে পথের ফকির, সাজানো গোছানো সংসার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, অনেকেই মানুষ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পথে পথে ঘুরছে আবার অন্য দিকে অনেক ফকির হয়ে গেছে লাখপতি, গাড়িবাড়ির মালিক হয়ে গেছে। আবার সময়ের পরিবর্তনে, স্বাধীনতার পর এই চিত্রের উল্টোটা হয়েছিল।

ফিরোজের চাচা গাজী মাসউদের চরিত্রটি সৃষ্টির মাধ্যমে বেঈমানদের একটি প্রতীকী চরিত্র সৃষ্টি করলেন লেখক। গাজী মাসউদ রাজারবাগ পুলিশ লাইনের তিনজন পুলিশকে জান বাঁচানোর জন্য আশ্রয় দিয়ে দুদিন পর হানাদারদের হাতে তুলে দেয়। তারপর ফিরোজ ও সুদীপ্ত শাহিনের কাছে সে আত্মতৃপ্তি প্রকাশ করে বলে ইসলাম ও দেশ রক্ষার জন্য একটি ভালো কাজ করেছে। মৌলভি সোবহানের চরিত্রটিও এদেশের অসংখ্য মৌলভির চরিত্রেরই প্রতিচ্ছবি। সে এক নারীকে ধর্ষণ করে কাফের হত্যার চেয়ে বেশি সওয়াবের কথা ব্যাখ্যা করে।

ঢাকার প্রাণ ও আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ক্রমে উত্তপ্ত কড়াইয়ের মতো হতে লাগল, ফিরোজ আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্য বলে তার বাসায় থাকা অনিরাপদ ভেবে সুদীপ্ত শাহীন সস্ত্রীক দুই শিশুকন্যা এলা ও বেলাকে নিয়ে পালিয়ে পুরানা ঢাকার এক খালার বাসায় গিয়ে দেখে বাসা তালা মারা। পাশের বাসায় নক করলে এক নারী জানায় তারা জিঞ্জিরায় চলে গেছে। এই নারীর নাম বুলা যিনি পেশায় শিক্ষক, গোপনে কমিউনিস্ট পার্টির বিপ্লবী কর্মী, প্রকাশ্যে বোরকা পরে জামাতের কর্মী। জামাতিদের পুস্তিকা বিতরণ করার জন্য প্রচুর পুস্তিকা তার হাতে আসে আর এগুলো জ্বালিয়ে মায়ের দুধ গরম করে দেয়। বুলা প্রৌঢ়া মায়ের সঙ্গে থাকে। বুলার বাড়িতেই তাদের আশ্রয় মিলে। তবে ওদেরকে গোপনে, পৃথক রুমে রাখা হয়েছে।

বুলাদের বাসাতেই উপন্যাসটি শেষ হয়। এখানে আওয়ামী লীগের বিপ্লবী নেতা জামালের সঙ্গে পরিচয় হয়। রাজনৈতিক তাত্ত্বিক বিষয় জামাল ও সুদীপ্তর মধ্যে হয়। বুলাদের বাড়িতেই উপন্যাসের গল্প শেষ হয় একটি স্বপ্নময় ভোরের প্রত্যাশা রেখে :

অনেক রাতে সুদীপ্ত শুতে গেলেন। মেঝেতে ঢালাও বিছানা। সারি সারি তাঁরা শুয়েছেন যত জনের শোয়া সম্ভব। আর এদের একজনকেও তিনি চেনেন না। সব থেকে বেশি চেনেন জামাল সাহেবকে, কিন্তু সে পরিচয়েই সূত্রপাত হয়েছে মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে। হ্যাঁ, ঠিকই, তো হয়েছে। নব পরিচয়ের সূত্রপাত হয়েছে। পুরোনো জীবনটা সেই পঁচিশের রাতেই লয় পেয়েছে। আতা তাই সত্য হোক। নতুন মানুষ, নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি প্রভাত। সে আর কতো দূরে। বেশি দূরে হ’তে পারে না। মাত্র এই রাতটুকু তো! তো! মা ভৈঃ কেটে যাবে। পৃষ্ঠা ১৮০

 

নাতিদীর্ঘ এই উপন্যাসে লেখকের বৈদগ্ধ্য ও কাহিনি নির্মাণের নৈপুণ্যের কারণে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের একটি পরিপূর্ণতা পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *